‘পপ অফ কালার’ একটি ফেসবুক গ্রুপ। মূলত নারীদের গ্রুপ। তবে এটি আর এখন শুধু গ্রুপ নয়। বরং একটি কোম্পানি। দেশের একমাত্র ও প্রথম ফেসবুক গ্রুপ যা কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। বৈধ ও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা করার লাইসেন্স পেয়েছে। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা টিংকার জান্নাত মীম।
কী হয় ‘পপ অব কালারে’? জানতে চাইলে মীম বললেন, “বর্তমানে কী ট্রেন্ড, কী স্টাইল চলছে সেটা নিয়েই আলোচনা হয় এখানে। অর্থাৎ মেয়েদের লাইফস্টাইল নিয়ে সব ধরনের আলোচনা বা তথ্য শেয়ার করা হয়। এটি আসলে রোটারি ক্লাবগুলোর আন্তর্জাতিক এবং ডিজিটাল ভার্সন। তবে আমার এই গ্রুপে বিশ্বের সব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের নারীদের অন্তর্ভূক্ত করা হয় বা হচ্ছে। যে কোনো পেশার নারী সমানভাবে এই গ্রুপে মেম্বার হিসেবে আছেন।”
আর মজার বিষয় হলো, মীম জানালেন, “পপ অফ কালারের মেম্বারদের পশিয়ান বলা হয়। এটি তাদের টাইটেল। গ্রুপের মেম্বার হলেই নামকরা দোকান থেকে শুরু করে অনলাইন পেজেও মূল্যছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।”
শুধু একটি অনলাইন গ্রুপের মেম্বার হলেই মূল্যছাড়? বিষয়টি অকল্পনীয় নয়? মীম জানালেন, “পপ অফ কালারের শুরুর দিকে বিষয়টি অকল্পনীয়ই ছিল। তবে এটিই এই গ্রুপের সবচেয়ে বড় অর্জন।”
“আর আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল ২০১৯ সালে স্বাধীনতা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া।”
তবে এই অর্জন একদিনে আসেনি। বললেন, “শুরুর দিকে এ ধরনের একটি পেশাকে বেছে নেওয়াটা বাবা মোটেই পছন্দ করেননি। তিনি চাইতেন আমি যেন ব্যরিস্টার হই। কারণ আমার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য সরকারি চাকরি করেন। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। তাই প্রথা ভেঙে এই পেশায় আসাটা সহজ ছিল না। ২০১৬ সালে বিয়ের পর, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ি থেকে অবশ্য পুরোপুরিভাবে সমর্থন পাই। এখন আমার দুই সন্তান। তাদের কাছ থেকেও সমর্থন ও সহযোগিতা পাই।”
‘পপ অব কালার’ শুরু হলো কেন? বললেন, “ইচ্ছে ছিল নারীদের নিয়ে কিছু একটা করার। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু দিকে, ২০১৪ সালে ফেসবুকে গ্রুপটি তৈরি করি। প্রথম দিকে গ্রুপে শুধু গল্প-আড্ডাই হতো। পরে মনে হলো, আরও অনেক কাজ তো করা যায় এখানে। তখন আমি আমার ব্যবহৃত কিছু পণ্যের ভালো-মন্দ সম্পর্কে মতামত দেওয়া শুরু করি গ্রুপে। আমাকে অনুসরণ করে গ্রুপ মেম্বাররাও। কোথাও বেড়াতে গেলে, কোথাও খেতে গেলে, সেসব নিয়েও মতামত আসে। বিষয়টি কিছু ব্র্যান্ডের চোখে পড়ে। ২০১৫ সালে আমার সাথে বিভিন্ন ব্র্যান্ডগুলো যোগাযোগ শুরু করে। তাদের পণ্য নিয়ে মতামত দিতে বলে।”
তবে গ্রুপের প্রথম সাফল্য ছিল বিশ্বখ্যাত হেয়ার স্টাইলিস্ট ‘জাওয়াদ হাবীব’ এর সঙ্গে ‘পপ অফ কালার’ এর কোলাবোরেশন এবং মেম্বারদের জন্য বিশেষ মূল্যছাড়। তখন থেকেই মেম্বারদের জন্য মেম্বারশিপ কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। আর এই কার্ড দেখিয়ে গ্রুপের সাথে যুক্ত বিভিন্ন দোকান, অনলাইন পেজ, রেস্টুরেন্ট, এমনকি রিসোর্টেও বিশেষ মূল্যছাড় পান মেম্বাররা।
ইচ্ছে আছে দেশের প্রতিটি জেলায় ‘পপ অফ কালারের” একটি করে সেন্টার তৈরি করার। যেখানে যে কোনো মেয়ে তাদের সমস্যা, হয়রানি বা নির্যাতনের কথা বলতে পারবে। এছাড়া কিছু ইভেন্ট আয়োজন করা হবে। সেখানে নারীদের কাজের স্বীকৃতি বা পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
লেখা: তাসনিম সারওয়ার রাইসা, সুলতানা স্বাতী