তাসফিয়া মুনতাসি রাইসা। ফটোগ্রাফার। তার গড়ে তোলা ‘স্টোরি লেন’ এখন দেশের অন্যতম সেরা ফটোগ্রাফি ও চিত্রগ্রাহক প্রতিষ্ঠান। অনলাইন ভিত্তিক এই ফটো স্টুডিওটির জন্ম ২০১৭ সালে। রাইসার অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলা এই প্ল্যাটফর্মে এখন কাজ করেন অনেকেই।
নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি চট্টগ্রামের মেয়ে। চট্টগ্রামের অপার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করত। কিন্তু ছবি তোলার ব্যাপারটি কখনো মাথায় আসেনি। এইচএসসি’র পর ঢাকায় এসে ভর্তি হলাম আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। তখন বন্ধুদের অনুরোধে ছবি তুলে দিতাম। তারা সেগুলো ফেসবুকে শেয়ার করত। বিশেষ করে প্রোফাইল ফটো। এভাবেই ফটোগ্রাফিতে হাতেখড়ি।”
রাইসা বলেন, “তখনও ভাবিনি ফটোগ্রাফিকেই আমি পেশা হিসেবে বেছে নেব। তবে ততদিনে নিজেই বুঝতে পারি, আমি পোর্ট্রেট ছবি ভালো তুলি। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় আমাদের তিন ক্রেডিটের একটি কোর্স ছিল। এই কোর্সে আমি ফটোগ্রাফি এবং ক্যামেরা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারি। আর এখান থেকেই ফটোগ্রাফি বিষয়ে অনুপ্রাণিত হই। এছাড়া বিখ্যাত মালয়েশিয়ান ফটোগ্রাফার গ্রেস ট্যানের ফটোগ্রাফি আমাকে বেশ আগ্রহী করে তোলে।”
এরপর থেকেই যেন পাল্টে যায় তার জীবন। সময় পেলেই প্রিয় ক্যানন-৫ ডি মার্ক টু ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন তিনি। ছবি তুলতেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে। কিন্তু এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয়নি? জানালেন, “আর্কিটেকচার পড়া খুব একটা সহজ নয়। তবে আমি পড়াশোনায় ফাঁকি দিইনি। পড়াশোনার বাইরের পুরোটা সময় ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি।”
প্রথম দিকে তার ফটোগ্রাফির বিষয়ে পরিবারের সদস্যদেরও সমর্থন ছিল না। “বিশেষ করে বাবা চেয়েছিলেন, আমি আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার হবো। তাই চেয়েছিলেন আমি যাতে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হই। কিন্তু ততদিনে আমি একটা ফটোগ্রাফি ফার্মে কাজ করা শুরু করে দিয়েছি। ফলে তখন তা পরিবারকে না জানিয়েই শুরু করি। পরে গ্রাজুয়েশন শেষ হলে, বাবা যখন দেখলেন, আমার ফটোগ্রাফিতেই শখ, আর এখানে আমি ক্যারিয়ারের অনেকটাই এগিয়ে গেছি, তখন বরং সমর্থন দিয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন।”
ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা শুরুর দিকে অতটা সহজও ছিল না। বললেন, “আমাদের সমাজ একজন নারীর ফটোগ্রাফি পেশাকে ভালোভাবে নিতে পারে না। অনেকেই নারীর ওপর ভরসা করতে পারেন না। তবে আমাদের চিন্তা-ধারারও পরিবর্তন হচ্ছে। এখন অনেকেই নারী ফটোগ্রাফার দিয়েই বিয়ের ছবি তোলাতে চান।”
গৃহিণী মা নাহিমা আকতার, ব্যবসায়ী বাবা এ জে এম সালাহউদ্দিন আর দুই ভাইকে নিয়ে রাইসার পৃথিবী। এখন পাশে আছেন স্বামী। যিনি তার কাজে সব সময় সহযোগিতা করছেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে রাইসা বলেন, ‘‘স্টোরি লেন- কে এমন একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে মানুষ বিয়ের ফটোগ্রাফি মানেই যেন আমার প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়। এছাড়া নারীদের জন্য একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যা সকল নারীদের সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।” একজন ভালো চিত্রগ্রাহক হওয়ার পাশাপাশি এই দু’টি লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
লেখা: তাসনিম সারওয়ার রাইসা, সুলতানা স্বাতী