নাভিন আহমেদ। তরুণ ও গুণী মেকআপ শিল্পী। রূপচর্চা অঙ্গনে এরই মধ্যে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বিয়ের সাজে নিখুঁত কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে তার ‘গালা মেকওভার স্টুডিও অ্যান্ড স্যালন।’ সপ্তাহের সাতদিনই তিনি বিয়ের কনে সাজাতে ব্যস্ত থাকেন। এমনও দিন যায়, তাকে ১০-১৫ জন বউ সাজাতে হয়।
কীভাবে এলেন এ পেশায়? উত্তরে নাভিন জানালেন, “পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিলাম না। কিন্তু আমি ভালো ছবি আঁকতাম। আঁকা আমার ভালোবাসা। নেশা। ‘ও’ লভেলে ‘আর্টে’ অনেক বেশি নম্বর পাই। তখন আর্টকেই পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার চিন্তা করি। কিন্তু আমি সাজতে পছন্দ করি। সবচেয়ে পছন্দ করি অন্যকে সাজাতে। পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় আর বন্ধুদের সাজাতাম। ধীরে ধীরে আমার ছবি আঁকার ক্যানভাস হয়ে উঠেছে মানুষের মুখ। ঐ সময় আমার এক কাছের বন্ধু কানাডায় মেকআপ বিষয়ে পড়াশোনার কথা বলে। ও নিজেও তখন কানাডায় থাকতো।”
২০০৪ সালে কানাডায় পাড়ি জমান নাভিন। টরন্টোর ‘শেরিড্যান কলেজে’ ‘কসমেটিক টেকনিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টস’ বিষয়ে দুই বছরের ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
নাভিন বলেন, “শেরিড্যান কলেজে পড়া আমার জন্য অনেক বড় টার্নিং পয়েন্ট। দেশে ফিরে অভিজ্ঞতার জন্য অন্যদের স্যালনে কাজ শুরু করি। পাশাপাশি বনানীতে বিকনহাউজ স্কুলে শিক্ষকতা করি।”
২০১০ সালে নাভিন বিয়ে করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও বিডাব্লিউসিসিআই’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সংগীতা আহমেদের বড় ছেলে রিয়াদ শাহির আহমেদ হোসেনকে। গুলশানের ভাড়া বাসায় শুরু হয় তাদের সংসার।
বললেন, “বিয়ের পর ঘরোয়া পরিসরে রূপচর্চা সেবা দেয়া শুরু করি। বেছে নিই বিয়ের সাজকে। গ্রাহকদের বাসায় গিয়ে কনে সাজানোর প্রচুর ফরমায়েশ পেতাম তখন। ২০১২ সালে মাছরাঙ্গা টিভিতে সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে যোগ দিই। ২০১৪ সালে সেটি ছেড়ে পুরোপুরি রূপচর্চা সেবায় মনযোগী হই। আসলে তখন আমার স্বপ্ন ছিল একটি মেকআপ স্টুডিও দেয়ার। এ কারণেই মেকআপের পাশাপাশি অন্য কাজগুলো করতে থাকি, যাতে বিনিয়োগ করতে পারি।”
স্টুডিও শুরু করলেন কবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিয়ের পর, বাসায় একটি রুমে কনে সাজাতাম। তখন আমার সহকারী ছিলো একটি মেয়ে। কিন্তু সমস্যা হলো, বাসায় গ্রাহক থাকলে অফিস শেষে রিয়াদ বাসায় আসতে পারত না। তাকে দু’তিন ঘণ্টা বাইরেই অপেক্ষা করতে হতো।”
ধীরে ধীরে গ্রাহকদের সাড়া বাড়তে লাগলো। ফলে গুলশানে একটি ফ্ল্যাটে তিনজন মেয়ে সহকারী নিয়ে রূপচর্চা সেবা দেয়া শুরু করেন নাভিন। বললেন, “অবশেষে বিনিয়োগে এগিয়ে এলেন মা, শাশুড়ি ও খালা শাশুড়ি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে গুলশান ২ নম্বরে চালু হলো ৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের ‘গালা মেকওভার স্টুডিও অ্যান্ড স্যালন’। তখন ২০ জন কর্মীকে নিয়োগ দিই। আর তাদেরকে আমিই প্রশিক্ষণ দিই।”
এখন এই স্যালনটির সঙ্গে কাজ করছে ওয়েডিং ডায়েরিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। অল্প সময়ে এতটা সফলতার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “গুণগত মানের সেবা আর পেশাদারিত্ব- এ দু’টিই আমি আমার স্যালনে নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। গ্রাহকরা কি চায়, কিভাবে চায়- এই বিষয়টি আমি মনে রাখি সব সময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচল থাকি। রূপচর্চা ও সাজসজ্জার ট্রেন্ড কোন দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়েও আপডেট থাকি।”
ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের এই জননী বললেন, “এখন আমার স্বপ্ন বাচ্চাদের বড় করে তোলা। তবে ভবিষ্যতে বিয়ের সাজের সাথে বিয়ের পোশাকের ফ্যাশন হাউজ চালু করার ইচ্ছে আছে।”
লেখা: সুলতানা স্বাতী