দেশের অভিনয় জগতে একটি পরিচিত নাম- সুমাইয়া শিমু। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আছেন অভিনয় জগতে। এত দীর্ঘ সময় ধরে সুনামের সঙ্গে নিজের কাজটি করে যাওয়া, এই সময়ের নানা অভিজ্ঞতা, আগামী পরিকল্পনা- এসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি লাইফ এর সঙ্গে।
জানতে চাওয়া হয়েছিল- অভিনয় জগতে আসার শুরুর অধ্যায় সম্পর্কে। সুমাইয়া শিমু বলেন, “আমার অভিনয় জগতে যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, তখন আমি উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী। খুব পরিকল্পনা করে যে আসা, তা কিন্তু নয়। পরিকল্পনা যেমন ছিল না, ছিল না কোনো প্রস্তুতিও। নিছক ভালো লাগা থেকেই যুক্ত হওয়া।
“শুরুটা হয়তো না বুঝে করেছিলাম, কিন্তু যখন বুঝতে শিখেছি তখন কাজের প্রতি আমার ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। বেড়ে গেছে পরিশ্রম করার আগ্রহও। আসলে পরিশ্রম না করে উপায়ও নেই। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমাদের অভিনয় জগতটা এমন যে, এখানে কঠোর পরিশ্রম না করলে টিকে থাকাই সম্ভব নয়। দূর থেকে অনেকেই হয়তো ভাবে, এটা বুঝি খুব সহজ একটা পেশা। অথচ বাস্তবতা অন্য রকম। আমাদের কাজের বাঁধাধরা কোনো সময় নেই। দেখা যায় একদিন সকাল ৭টায় বের হতে হচ্ছে, ফিরছি গভীর রাতে। আবার হয়তো কোনোদিন ঢাকার বাইরে যেতে রাত দুটোর সময় বের হতে হচ্ছে। সে কারণে পরিবারের সাপোর্ট না পেলে এ পেশায় টিকে থাকা সহজ নয়।”
পরিবারের সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন। শিমু জানান, সেই শুরুর দিকে যেমন পেয়েছেন, তেমনি বর্তমানের এই টাইট সিডিউলেও পরিবারের শর্তহীন সাপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। তার মা, দুই ভাই-বোন আর স্বামীর কাছে থেকে সেই সহযোগিতা এখনো পাচ্ছেন।
অভিনয়ের জগতে আসা হয়তো যায়, কিন্তু টিকে থাকতে পারে কয়জন? সুমাইয়া শিমু টিকে আছেন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। কী রহস্য এর পেছনে? শিমু বলেন, “টিকে থাকার মূলমন্ত্রটি হচ্ছে কাজকে ভালোবাসা, কাজের প্রতি আগ্রহ থাকা আর কাজ করে তৃপ্তি পাওয়া। একেবারে শুরুর দিকে যখন কোনো স্ক্রিপ্ট আসতো তখন আমার মাঝে যে উত্তেজনা কাজ করত বা আমি যতটা আগ্রহ নিয়ে স্ক্রিপ্টটি পড়তাম বা কাজ করতে যেতাম, ঠিক একই উত্তেজনা, আগ্রহ এখনো আমার মাঝে কাজ করে। যতদিন সেটা নিজের মধ্যে টের পাব, হয়তো কাজটা করে যাব।”
তবে এই অভিনয় কি কেবল অভিনয়ের জন্যই? সমাজের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ কি থাকতে নেই? সুমাইয়া শিমুর মতে অভিনয় যারা করেন, সমাজের প্রতি তাদেরও একটা দায়বদ্ধতা থাকা দরকার। তিনি বলেন, “আমার দর্শক যারা আছেন তারা হয়তো দেখেছেন যে আমার কর্মজীবনে নারীবিষয়ক বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ের সময় সূক্ষ্মভাবে একটি ব্যাপার আমি দেখার চেষ্টা করি। দেখি সেখানে বিনোদনের পাশাপাশি নারীকেন্দ্রিক কোনো তথ্য বা ভালো কোনো বার্তা যেন থাকে।”
সামাজিক এই দায়বদ্ধতা তিনি অনুভব করেন তার অভিনয়ের বাইরের জীবনেও। তিনি বলেন, “আমি মনে করি একজন নারী যতদিন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হবেন ততদিন নারীর ক্ষমতায়ন শতভাগ সফলতা পাবে না। আমি চাই বাংলাদেশের সকল নারী আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর হোক। এলক্ষ্যেই প্রায় দেড় বছর হলো আমি একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছি, যার নাম ‘Better Future for Woman,’ যেখানে মূলত নারী কেন্দ্রিক বিষয়াবলি নিয়ে কাজ করে থাকি। সাংগঠনিক এই যে কাজটা, অভিনয়ের মত এটি করেও আমি তৃপ্তি অনুভব করি, কাজটিকে ভালোবাসি।”
লেখা: তাসনিম সারওয়ার রাইসা
ছবি: মাহমুদা তুলি
Nice