গল্পটা ২০০৩ সালের। স্নিগ্ধ ফাল্গুনের কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে ব্যাট প্যাড নিয়ে হাজির রক্ষণশীল পরিবারের ছোট্ট একটা মেয়ে। কিন্তু মেয়ে বলেই কিনা স্কুলের বন্ধুদের তাকে নিয়ে যত আপত্তি। তাইতো বিদ্রোহী সেই মেয়েটা নিজেই গঠন করলেন এলাকার নারীদের নিয়ে একটা ক্রিকেট দল। ক’দিন বাদেই যে দলের খবর, সে তল্লাট ছাঁপিয়ে পৌঁছে যায় সর্বত্র। তারপর সেই মেয়েটার শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
রুমানা আহমেদ। বাংলার নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে ক্যাপ্টেন। টাইগ্রেসদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম হ্যাট্রিক করার বিরল কীর্তিও তার দখলে। শুধু মাঠের পারফর্মেন্সেই নয়, নেতৃত্বগুণেও যিনি অনন্য। ২০১৮ সালে ভারতের দম্ভকে চূর্ণ করে এশিয়া কাপ জয়ের অন্যতম রূপকার তিনি। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৩৮টি ওডিআই আর ৬৫টি টি-টোয়েন্টি। এক দশকের ক্যারিয়ারেই সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠা রুমানা পেরিয়েছেন জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই। তবে তীব্র পেষণা, জয় করার অদম্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস, তাকে আলাদা করেছে অন্যদের চেয়ে।
রুমানার শুরুর গল্পটা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই। পরিবার চায়নি। মায়ের স্বপ্ন ছিল মেয়ে বড় হয়ে যেন ডাক্তার হয়। আর মেয়ে নিজেও চেয়েছিল বিজ্ঞানী হতে। ক্রিকেট খেলতেন একেবারে ছোটবেলা থেকেই, তবে তখনও এটাকে যে পেশা হিসাবে নেওয়া যায়- সে চিন্তা মাথাতে আসেনি। একটু বড় হয়ে, এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার পর, যখন সিদ্ধান্ত নিলেন হবেন ক্রিকেটার, তখন পরিবারের সঙ্গে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় রক্ষণশীল সমাজ। তবে এগিয়ে যাওয়ার পথে কখনই এসবকে আমলে নেননি তিনি। রুমানার মতে শুধু ক্রিকেট নয় যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই পুরুষদের চেয়ে নারীদের বেশি কিছু করে দেখাতে হয়। কারণ নারীদের সুযোগ আসে কম। ফলে যখনই যে সুযোগ আসুক, তাকে কাজে লাগানোতে দেখাতে হবে মুন্সিয়ানা।
তবে সেখানেও আছে আক্ষেপের গল্প, ছেলেদের ক্রিকেটে যেখানে অর্থের ঝনঝনানি বিপরীতে নারী ক্রিকেটে দীনতা স্পষ্ট। বেতন কাঠামো কিংবা নিয়মিত লিগ নিয়ে আছে উদাসীনতা। তবুও রুমানার বিশ্বাস কোনো একদিন নিশ্চয় কেটে যাবে সব শঙ্কা, সমতায় ফিরবে নারী ক্রিকেটও।
তাঁর মতে, ২২ গজে প্রতিপক্ষের বাউন্সার সামলানোর চেয়েও বেশি কঠিন বিধিনিষেধের দেয়াল ভাঙ্গা। তবে সে জন্য, নারীকে আত্মবিশ্বাসী, কর্মঠ, সাহসী ও সুবিবেচনার অধিকারী হওয়াটা জরুরি। তাইতো যে সমাজ তার স্বপ্ন যাত্রার পথে একদিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তারাই আজ রুমানাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। আর এটাকেই ক্যারিয়ারের বড় প্রাপ্তি বলছেন খুলনার এই ক্রিকেটার।
এক নজরে রুমানার ক্যারিয়ার
ম্যাচ ইনিংস রান সর্বোচ্চ উইকেট
ওডিআই ৩৮ ৮২৭ ৭৫ ৪২
টি-টোয়েন্টি ৬৫ ৭৪৬ ৫০ ৫৭
লেখা: মাহবুব রিমন