মিফরা জাহির লেখাপড়া করেছেন আইন নিয়ে, ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টার হয়ে এসে আইনজীবী হিসেবে কাজও করছেন। কিন্তু এটাই যেন তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। তাঁর কর্ম অনুসরণ করেছে তাঁর স্বপ্নকে, কাজ করেছেন মেয়েদের পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সাথী’ নামের একটি এনজিও।
কীভাবে কী হলো? বিষয়টা বরং জানা যাক তার জবানীতেই। “আমি লন্ডনের সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার-এট-ল করে ২০১২ সালে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফেরার পর সাদাত-সারওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস্ এবং সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ এন্ড অ্যাসোসিয়েটসে কাজ করেছি। এখন আইন ও সালিশ কেন্দ্রে কাজ করি। “এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে করতেই ভাবলাম দেশের অসহায় মহিলাদের জন্য কিছু করা যায় কি-না। আমাদের দেশে অবশ্য এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। কিন্তু আমার মনে হলো সেটা যথেষ্ট নয়। তাদের মৌলিক অধিকার যে স্বাস্থ্য, সেটাই বোধকরি আমাদের চোখে পড়ছে না। আমার মনে হল তাদের মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততটা গবেষণা হচ্ছে না এবং গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। মাসিক স্বাস্থ্যে অবহেলার কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্যজটিলতা দেখা দেয়। আমার মনে হলো একেবারে প্রন্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে আমি যদি এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারতাম তাহলে নিজেকে সফল মনে করতাম। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘সাথী’ এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করি।”
নতুন এই এনজিও’র কাজ মূলত পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে মেয়েদেরকে সচেতন করা। এ কাজটি করার জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, গার্মেন্টেসে গিয়ে মেয়েদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
এনজিও কর্মীরা শুধু মেয়ে নয়, বরং ছেলেদের সাথেও কথা বলে। যাতে সে তার মেয়ে বন্ধুর কোনো সমস্যা হলে কিংবা বোন বা মায়ের কোনো সমস্যা হলে স্যানিটারি প্যাড, মেডিসিন এসব কিনে এনে দিতে পারে। মিফরা জাহির বলেন, “এছাড়া মেয়েদের মধ্যে কিছু কিছু কুসংস্কার রয়েছে। যাদের পিরিয়ড হয় তাদেরকে হয়তো বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে দেয় না কিংবা রান্নাঘরে ঢুকতে দেয় না। এসব বিষয়ে সচেতন করাও আমাদের কাজ। সাধারণত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের পর সেটা সব জায়গায় ফেলা যায় না। আর স্যানিটারি ন্যাপকিনের নিয়ম হচ্ছে প্রতি ৪-৬ ঘন্টা পর পর পরিবর্তন করে পরতে হবে। আমাদের ‘সাথী’ ন্যাপকিনে কোনো প্লাস্টিক থাকছে না। ফলে সেটা ধুয়ে আবার ব্যবহার করা যায়। সাথী ন্যাপকিন একবার কিনলে ৭-৮ মাস ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটি ন্যাপকিনের দাম ৪০ টাকা। এটা পরিবেশবান্ধাবও। কারণ প্লাস্টিক না থাকায় পরিবেশের ক্ষতি করবে না।”
মিফরা জানান, এরই মধ্যে রায়েরবাজার ও কড়াইল বস্তিতে সাথী ন্যাপকিন পাঠানো হয়েছে। ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যাচ্ছে। সামনে পরিকল্পনা সারা বাংলাদেশে বিতরণ করার।
নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, “একজন আইনজীবী হিসেবে আমার ভবিষ্যৎ ইচ্ছে নারীদের ঘরোয়া সহিংসতার উপর কাজ করা। নারীদের অধিকার নিয়ে আমার অর্গানাইজেশন কাজ করবে। নারী ও শিশুদেরকে আইনি সহায়তা দিতেও কাজ করব। আরেকটা বড় ইচ্ছে হলো সপ্তাহে ৭ দিন এবং ২৪ ঘন্টা একটা হেল্পলাইন চালু করা যাতে করে মেয়েরা পিরিয়ডকালীন যেকোনো তথ্যসেবা নিতে পারে। নতুনদেরকে বলব নারীদেরকে নিয়ে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসুন। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে এলেই নারীদের জন্য একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারব।
লেখা: জুবায়ের আহম্মেদ
ছবি: মাহ্মুদা তুলি