রান্না দেখাও কি কারো শখ হতে পারে? ফাবিহা নওশিন প্রভা’র শখ কিন্তু বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে সেখানকার বিশেষ রন্ধনপ্রণালি দেখা। আর এই শখটাই এখন তার পেশা। কী করে?
প্রভা বললেন, “খাবার বিষয়ক যে কোনো কাজই আমার পছন্দ। সেটা রান্না হতে পারে। রান্নার আয়োজনও হতে পারে। সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশনও হতে পারে। এমনকি রান্নাঘর গুছিয়ে রাখতেও আমার ভালো লাগে। পাশাপাশি আমি ঘুরতে ভালোবাসি। যেখানেই বেড়াতে যাই, সেখানকার নতুন নতুন খাবার ও রান্নার প্রণালি দেখি। আর এভাবেই আমি হয়ে উঠি একজন ফুড ব্লগার। তবে আমার ব্লগ সাইট ‘প্রভাইটস’ গড়ে ওঠে হঠাৎ করেই।”
এই পেশা নির্বাচনে পরিবার থেকে বাধা আসেনি? জানতে চাইলে প্রভা বলেন, “বাবা চেয়েছিলেন আমি চিকিৎসক হই। কারণ তিনি নিজে চিকিৎসক। তবে আমি ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম। সেই চাওয়াটাকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। বাধা দেননি। যদিও আমার বোন ও মা এই কাজে উৎসাহ দিয়েছেন সবসময়।”
বিদেশে ফুড ব্লগিং যতটা পরিচিত, আমাদের দেশে ততটা নয়। তাই ফুড ব্লগিংকে পেশা হিসেবে নিতে সমস্যায় হয়নি? বললেন, “যেহেতু আমার কাজটা অনলাইনভিত্তিক। ফলে অনেকেই আমার পোস্টে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন। বিশেষ করে আমার চেহারা বা কথা বলার ধরন নিয়ে। আমার কাজ নিয়ে সমালোচনা করলে, হয়তো আমি সেখান থেকে কিছু শিখতে পারতাম। কিন্তু আমাকে নিয়ে করা নেতিবাচক মন্তব্যে আমি কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ি। তবে আমি পিছু হটিনি। লেগে থেকেছি। নিজস্ব একটি পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছি। এখন মানুষ ধীরে ধীরে এ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারছেন। তাই আমাকে হাঁটতে হবে আরো অনেক পথ!’
অনুপ্রাণিত করার মতো ঘটনাও আছে প্রভার। বললেন, “এই তো সেদিন এক রেস্টুরেন্টে এক মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি প্রভাইটস কিনা? বললেন, তার মা নাকি আমার রেসিপি দেখেন। কাজের ক্ষেত্রে এটিই আমার অনেক বড় পাওয়া। অনেকেই আমাকে এখন চেনেন আমার বিভিন্ন পানীয় রেসিপির জন্য।
“আর এখন তো অনেক রেস্তোরাঁই আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। তবে আমি আমার কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখি। হয়তো কোনো রেস্তোরা আমাকে সম্মানি দিয়েছে কিন্তু তাদের খাবারের মান খুব একটা ভালো নয়, আমি সেটাই বলেছি। আর মানসম্মত হলে ভালো বলেছি। এক্ষেত্রেও আমাকে কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে আমি কাজের ক্ষেত্রে আপস করিনি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রভা বলেন, ‘ইচ্ছে আছে একটি রেস্তোরাঁ দেওয়ার। কোনো ফুড ব্র্যা্ন্ড বা কোনো মার্কেটিং এজেন্সির সাথে কাজ করার। তাছাড়া আমি এখন ইউটিউব নিয়েও কাজ করছি। কারণ আমি চাই আমার পরিচিতি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ুক।
তাঁর মতে, ইচ্ছাশক্তিটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। সফল হতে হলে ভরসা রাখতে হবে নিজের ইচ্ছাশক্তির ওপর। বলেন, “অনলাইনে নেতিবাচক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় বেশি। তবে সে সকল বিষয় উপেক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে।”
লেখা: তাসনিম সারওয়ার রাইসা, সুলতানা স্বাতী।
ছবি: মাহমুদা তুলি।